ইমাম খাইর, শাহেদ মিজান, সিবিএন:
একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। সকাল ৮টা থেকে সারাদেশে একযোগে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। ভোট দিতে ভোর থেকে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে চলে আসেন। এখন পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ চলছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হওয়া এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ও ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্ট মুখোমুখি হয়েছে। তবে প্রধান দল হিসেবে বিএনপির প্রতীক ধানের শীষ নিয়েই ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। জামায়াত ইসলামী ঐক্যফ্রন্টের দ্বিতীয় বৃহৎ দল হিসেবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসন বরাদ্দ পেয়েছেন। বহুল আলোচিত ও প্রতীক্ষিত আজকের নির্বাচনে কোন দল ক্ষমদায় যাচ্ছেন তা নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা চলছে দীর্ঘদিন ধরে। তবে তার অপেক্ষার প্রহর প্রায়ই শেষ হয়ে এসেছে। ভোট গণনার পরই নির্ধারণ হবে আগামী পাঁচ বছর বাংলাদেশকে কারা চালাবেন!
সকাল ৮ টা ১৫ মিনিটে কক্সবাজার সদরের ইসলামপুর নাপিতখালী হাই স্কুল ভোট কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, ভোটাররা ভোটের লাইনে দাঁড়িয়েছে। পুরুষ ও নারীরা সমানতালে ভোট দিতে এসেছে। সকাল ৮ টা বাজার আগেই লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে ভোটারদের।
তবে, ‘ভোটার সিরিয়াল নাম্বার’ নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে ভোটারদের। কারণ, এই এলাকার ভোটারদের স্মার্টকার্ড দেয়া হলেও ভোটার লিস্টের সিরিয়াল হয়েছে পুরনো ভোটার নাম্বার অনুযায়ী। এ কারণে ভোটের লাইনে যেতে দেরী হচ্ছে ভোটারদের।এর মধ্যেও সকাল সোয়া নয়টা পর্যন্ত সুন্দর ভাবেভোট গ্রহন হতে দেখা গেছে।
এদিকে, কক্সবাজার সদরের বেশ কয়েকটি ভোটকেন্দ্রে সকাল থেকে ধানের শীষের এজেন্টদের বের করে দেয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করছে স্থানীয় ভোটাররা।
একইভাবে উখিয়া ও টেকনাফের অনেক ভোটকেন্দ্রে এজেন্ট বের করে দেয়ার অভিযোগ করেছে সেখানকার বিএনপি নেতারা।
তারা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে অভিযোগ কর প্রতিকার পাচ্ছে না বলেও সিবিএনকে মুঠোফোনে জানিয়েছে।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য মতে, আজকের ভোটযুদ্ধে কক্সবাজারের আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ২৮জন প্রার্থী। তবে মুল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন আওয়ামী লীগ ও ঐক্যফ্রন্টের নয় প্রার্থী।
তারা হলেন- কক্সবাজার-১ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী সালাহ উদ্দীন আহমদের স্ত্রী সাবেক সংসদ সদস্য হাসিনা আহমদ এবং চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাফর আলম।
কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন তিন প্রার্থী। তারা হলেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, ২০ দলীয় জোট ও ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী কারাবন্দী হামিদুর রহমান আযাদ ও ধানের শীষের প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য আলমগীর ফরিদ।
কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাইমুম সরওয়ার কমল ও ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য লুৎফুর রহমান কাজল।
কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনেও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছে আওয়ামী লীগ ও ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী। তারা হলেন, বর্তমান সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির স্ত্রী শাহীন আকতার ও সাবেক চারবারের সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরী। এই নয় প্রার্থীর মধ্যে চারজনই জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে শেষ হাসি হাসবেন চার ভাগ্যবান!
ভোট গ্রহণে নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালন করছে সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, আমর্ড পুলিশ ও আনসার সদস্যরা। তবে সেনাবাহিনীর প্রতিই ভোটারদের আস্থা রয়েছে। কক্সবাজারের চার আসনে ৪টি পৌরসভা ও ৭১ ইউনিয়নের ৫১২ ভোটকেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ১৩ লাখ ৬৫ হাজার ২০৪ জন। এরমধ্যে ৭ লাখ ৭ হাজার ৮৩১ জন পুরুষ এবং ৬ লাখ ৫৭ হাজার ৩৭৩ জন মহিলা।
সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নিরপেক্ষাবে ভোটগ্রহণের জন্য জেলার চার আসনই নিশ্চিদ্র নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা হয়েছে। এর জন্য দায়িত্ব পালন করবেন ৩০ প্লাটুন সেনাবাহিনী, ৬ প্লাটুন নৌবাহিনী, ৪৮ প্লাটুন বিজিবি, ১০টি স্ট্রাইকিং ফোর্স পুলিশ ও ২ কোম্পানি র্যাব। তবে র্যাব এর এই ২ কোম্পানি কক্সবাজার জেলা ছাড়াও চট্টগ্রামের দুইটি আসনের দায়িত্বে থাকবেন। তাদের নেতৃত্ব দেবেন ৮৬ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। এছাড়াও আনাসার ও গ্রাম পুলিশ শৃংখলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবেন প্রত্যেক ভোট কেন্দ্রে।
রিটার্নিং কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন জানিয়েছেন, কক্সবাজারের চার আসনে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নিরপেক্ষভাবে ভোট সম্পন্ন করার জন্য বিপুল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন। কেউ ভোটগ্রহণকালে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।